,

আ.লীগ নেত্রী আনারকলির ‘দখলের থাবা’

জেলা প্রতিনিধি,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ক্ষমতাসীন দলের পদের দাপটে নানা দিকে দখলের থাবা বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আনারকলির বিরুদ্ধে।

আশুগঞ্জে রেলওয়ের জলাশয় অবৈধভাবে ভরাট এবং এলজিইডির রাস্তার জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে এই মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। তার কর্মকাণ্ড ঠেকাতে গিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপদস্ত হতে হয়েছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শাহগীর আলমের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আশুগঞ্জ বাজারের মো. হারুনুর রশীদ।

আনারকলি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অর্থ সম্পাদক। তার বাড়ি আশুগঞ্জের সোনারামপুরে।

অভিযোগে বলা হয়, প্রভাবশালী নেত্রী আনারকলি আশুগঞ্জের রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রেলওয়ের ১ হাজার ১৮৮ বর্গফুট জায়গা লিজ নেন মৎস্য, কৃষি ও নার্সারি করার শর্তে। তিনি লিজের শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে মার্কেট নির্মাণের জন্য জলাশয় ভরাট শুরু করেন।

গত ৩০ এপ্রিল আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধভাবে মাটি ভরাটে বাধা দেন। এ সময় আনারকলি আরও দু-তিনজনকে নিয়ে গালাগালসহ সরকারি কাজে বাধা দেন।

ওই ঘটনায় সহকারী কমিশনারের পক্ষে নাজির মনিরুজ্জামান একই দিন আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

জলাশয় ভরাটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আনারকলি দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় সময় টেলিভিশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যুরোপ্রধান উজ্জ্বল চক্রবর্তী আনারকলির বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, গত বুধবার দুপুরে অবৈধভাবে জলাশয় ভরাটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি ও তার ক্যামেরাপারসন মো. জুয়েল রহমান আনারকলির রোষানলে পড়েন। তিনি দেখে নেয়ার হুমকি দেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন আনারকলি।

 সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, ‘সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আনারকলি আমাদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। তিনি চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকি দেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা নূর উল্লাহ সরকার বলেন, ‘ওই নেত্রী লিজ নেয়া জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করেছেন। প্রতিদিন এখানে যানজট লেগে থাকে। ওই নেত্রীকে কেউ কিছু বলতে পারেন না। যে তার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাকে চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতন মামলা দেয়ার ভয় দেখান।’

এ বিষয়ে আনারকলি জানান, রেলওয়ের কাছ থেকে তিনি জায়গাটি বাণিজ্যিকভাবে লিজ নিয়েছেন। জায়গাটি ৯৯ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট প্রশস্ত। মোট ১ হাজার ১৮৮ বর্গফুট।

মার্কেটে দোকান ভাড়া নেয়া আল-আমিন বলেন, আমি আনারকলির কাছ থেকে মাসিক ৪ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। সিকিউরিটি বাবদ দিয়েছি ৬০ হাজার টাকা।

জলাশয় ভরাট করার অভিযোগ অস্বীকার করে আনারকলি জানান, জলাশয়ের পাড় ভরাট করে সেখানে তিনি কয়েকটি দোকান নির্মাণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব প্রথমে কোনো পরিচয় দেননি। তাই তার সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। জায়গাটি এলজিইডির লোকজনও পরিদর্শন করে গেছেন। তারা কিছু বলেননি। এসিল্যান্ড জায়গাটি দেখতে এসে আশুগঞ্জ থানার ওসির সামনে অশোভন আচরণ করেছেন।’

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দু বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘লিজের শর্ত ভঙ্গ করে আনারকলি অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করছেন জেনে এসিল্যান্ড বাধা দিতে যান। তখন আনারকলি এসিল্যান্ডের সঙ্গে অশোভন ও আপত্তিকর আচরণ করেন।

‘এ ঘটনায় এসিল্যান্ডের পক্ষে নাজির মনিরুজ্জামান খন্দকার আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এলজিইডির জায়গা দখলের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। রেল কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানাব।’

আনারকলির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ডিসি মো. শাহগীর আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রেলওয়ের ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, লিজের শর্ত ভঙ্গ করলে এবং অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর